39. যদি একটি হৃদয় জেগে উঠে, পর্ব-৫
আজও বুঝে উঠতে পারিনি -কিসের এত অহংকার মানুষের? কার সামনে এতো দম্ভ, কার চোখে এই ক্ষমতার প্রদর্শন?
একটুখানি সম্মান পেলে কেউ নিজেকে পাহাড় ভাবে, আর সামান্য তর্কেই চোখে উঠে আগুন। ঘৃণার আগুনে পুড়িয়ে ফেলে চারপাশ, ভুলে যায় -এই জীবন ক্ষণিক, এই দুনিয়া ধোঁয়ার মতো।
নিজেই তো প্রতিনিয়ত এক ভাঙা মানুষ, ভেতরে-বাইরে লড়াইয়ে ক্লান্ত আত্মা। জীবনে এমন অনেক কিছু আছে যা সারাতে চাইলেও সারাতে পারি না, ভাঙনের শব্দ পাঁজরের গভীরে প্রতিধ্বনিত হয়।
তবু কিছু মানুষ -অহংকার নিয়ে হাঁটে, যেন শূন্যে উড়ে। ক্ষমতার মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভাবে, সমস্ত পৃথিবী যেন তাদের পায়ের তলায়। ঘৃণা তাদের নেশা, অবজ্ঞা তাদের ভাষা। আমি বিস্মিত হই না, কিন্তু ব্যথিত হই।
কারণ আমি জানি, অহংকার যার অন্তরে, তার হৃদয়ে ভালোবাসার জায়গা থাকে না। ক্ষমতার মোহ যার চোখে, তার দৃষ্টিতে করুণা থাকে না। ঘৃণায় যাদের প্রাণ ভরে ওঠে, তারা ভালোবাসার ভাষা ভুলে যায়।
যদি আঘাত করো, প্রতিঘাতের আগুনে দগ্ধ হবো -এমনটা ভেবোনা। প্রতিক্রিয়া নয়, প্রতিফলন বেছে নিয়েছি। ব্যাথা নিয়ে দিকবিদিকশুন্য মানুষ নই, বদলে যাওয়ার মানুষ, দুরত্বে-বহুদূর নিজের শহর সাজিয়ে নেওয়ার মানুষ। কান্নায় হৃদয়ে ঝুমবৃষ্টি -নিজেকে শুদ্ধ করতে, নীরবতায় নতুন পথ খুঁজে নিতে।
ব্যস্ততা বাহ্যিক নয়, এ এক অন্তর্জগতের সংগ্রাম। প্রতিদিন লড়াই করি -নফসের সঙ্গে, সময়ের সঙ্গে, এই সমাজের চাপানো মানদণ্ডের সঙ্গে। নিজের ভেতরের মানুষটাকে প্রতিদিন একটু একটু করে গড়ার চেষ্টা করি। আঘাত পেলে চিৎকার করি না, নীরবতায় সবর করি। কার সঙ্গে প্রতিযোগিতা -নিন্দুকের সঙ্গে, অহংকারীর সঙ্গে?
বহমান জীবন হচ্ছে -পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল থাকতে, নিজের হিসেব-নিকেশ, দেনা-পাওনা মেলাতে। এই সাঁঝবাতির আলোয় এক স্বপ্ন বুনতে -উম্মাহর জন্য কিছু করে যাওয়ার, আলো ছড়িয়ে দেওয়ার, কিছুটা হলেও রেখে যাওয়ার স্বপ্ন।
সময় তো হাতে অল্প -এই অল্প সময়ে সাজাতে হয় পরিবার, পরিশোধ করতে হয় জীবনের দেনা, ভরসা দিতে হয় কিছু প্রিয় মানুষকে, আর তার মাঝেই এক স্বপ্ন লালন করি -উম্মাহর জন্য কিছু রেখে যাওয়ার। এই স্বপ্ন জীবনের শেষ সীমানা পর্যন্ত যাবে -অন্তকাল, ইনশাআল্লাহ্।
কিন্তু এই পথ মসৃণ নয়। পথ রুদ্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে আমারই ভিতরের দুর্বলতা, টেনে রাখে এই শহরের ব্যস্ততা, এই সমাজের অহেতুক প্রশ্ন।
প্রিয় মানুষগুলোকে -প্রতিদিন সময় দিতে পারি না, তাদের ভালোবাসা ধরে রাখি মনের গভীরে -নীরব শ্রদ্ধায়, অভ্যন্তরের তীব্র ভালোবাসায়। জীবনের মানে খ্যাতি নয়, প্রভাব নয় -জীবনের মানে, কিছু সেবা রেখে যাওয়া। কারও চোখের পানি মুছে দেওয়া। ভাঙা মনগুলোকে জোড়া দেওয়া।
এমন আবরণে, যারা নিন্দা করে, তাদের শব্দ হৃদয় ছুঁয়ে যেতে পারে না। সময় দিই স্বপ্নকে, মগ্ন থাকতে চাই আত্মনির্মাণে, আর যতটা পারি -এই অস্থির সময়েও শান্তির পথ খুঁজে ফিরি। দম্ভে নয়, দায়িত্বে আত্নমর্যাদা। প্রতিশোধ নিতে নয়, পরিবর্তনের জন্য শহরের বুকে দাড়িয়ে আছি। নিন্দার পথ ছেড়ে দিয়ে, নিঃশব্দে উম্মাহ্ সেবায় বাঁচতে চাই।
জবাব দেয়ার চেয়ে -কাজে ব্যয়, এ-ই হৃদয় ক্ষণস্থায়ী আবেগের নয়, চিরস্থায়ী উদ্দেশ্যে বাঁধা। আকাশের ঐ বিশালতায় মেঘের আবরণে চলছে -এক অনন্ত সফর।